প্রশ্নঃজনৈক নাস্তিকের অভিযোগ,
হাদীসে এসেছে, খায়বারে সকাল বেলা সেখানকার বাসিন্দারা কাজে মগ্ন থাকা অবস্থায় মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাদের কাছে গিয়ে যুদ্ধের ঘোষণা করলেন।
একটি অসম যুদ্ধ হল।
নবীজীর সৈন্যবাহিনী সাফিয়্যার বাবা উবাই বিন আখতাবকে হত্যা করল। সাফিয়্যার স্বামীকে হত্যা করল।তাকে নিয়ে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করলেন। তারপর তাকে বিয়ে করলেন।এগুলো কোনটিই বিবেকের সাথে যায় না। বিবেক এগুলো মানতে পারে না।যদি আমি একাত্তরে জন্ম গ্রহণ করতাম। তাহলে শত্রুর সাথে লড়াই করতাম। কিন্তু নিজের বিবেকের সাথে লড়াই করতে পারলাম না। তাই ইসলাম ছেড়ে নাস্তিক হয়েছি।
উত্তরঃনাস্তিকদের দাবী তারা মুক্তমনা। উদার চিত্তের অধিকারী হয়ে থাকেন। যারা মুক্তমনা হয়ে থাকেন,তাদের উচিত সব কিছুকে মুক্তভাবেই ব্যক্ত করা। মৌলিক কথা লুকিয়ে শুধু পরিণাম উল্লেখ করা মুক্তমনার কাজ নয়। বরং সংকীর্ণমনা ব্যক্তিদের কাজ।
উদাহরণতঃএকজন বলল,বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আলশামস বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাও করল। তাদের ঘরবাড়ী থেকে বের করে এনে হত্যা করল। তাদের কাছে রক্ষিত মালামাল লুট করল।এখন উপরোক্ত বক্তব্যটিকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে একজন বিবেকবান বলবে,আরে এতো জুলুম! এতো অন্যায়। একদল নীরিহ মানুষকে কেন হত্যা করল মুক্তি বাহিনী? কেন তাদের ঘেরাও করে লড়াইয়ে বাধ্য করল? এটা কি অমানবিক নয়?আমরা জবাবে বলব,যে ব্যক্তি প্রথম মন্তব্যটি করেছে, সে লোক প্রচণ্ড প্রতারক এবং ধোঁকাবাজ। সে শুধু আলশামস বাহিনীর উপর হামলা ও হত্যার চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু কি কারণে তাদের হত্যা করা হল? কেন তাদের উপর হামলা করল মুক্তিবাহিনী? তা উল্লেখ না করে মস্ত বড় খেয়ানত করেছে।যদি লোকটি প্রথমে উল্লেখ করত যে, আলশামস বাহিনী দেশের নীরিহ জনতাকে হত্যা করতে, বাড়িঘর লুণ্ঠন করতে বর্হিশত্রুদের আমন্ত্রণ করেছে। বর্হিশক্তিকে সহযোগিতা করেছে। এমনকি তারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে একাধিকবার ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের এ অমার্জনীয় অপরাধের শাস্তি স্বরূপ তাদের হত্যা করেছে মুক্তিবাহিনী।এভাবে পুরো বিষয়টি যে উল্লেখ করবে, সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুক্তমনা। আর যে ব্যক্তি শুধু হামলা ও হত্যার কথা উল্লেখ করল। কিন্তু তাদের অপরাধের কথা উল্লেখ করেনি। উক্ত ব্যক্তি মুক্তমনা নয়। বরং প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক ও সংকীর্ণমনা।
উপরোক্ত উদাহরণটি অনুধাবন করলে নাস্তিকটির উপরোক্ত আবেগী বক্তব্যটির প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারবেন। লোকটি কোন স্থানে প্রতারণা ও ধোঁকাটি দিয়েছে।খায়বারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিযানের কথা উল্লেখ করেছে নাস্তিকটি। কিন্তু কেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান পরিচালনা করলেন তা উল্লেখ না করে চরম ঘৃণিত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে সে।আমরা আসল হাকীকত সম্পর্কে জেনে নেই!খায়বারের অধিবাসী এরা কারা?খায়বারে যারা বসবাস করতো। তারা ছিল বনী নজীরের বাসিন্দা। ইহুদী।বনী নজীরের সাথে পূর্ব থেকে মুসলমানদের শান্তি চুক্তি ছিল। বনী নজীরের বস্তিতে একদা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে বসে ছিলেন। বনী নজীরের লোকেরা বাহ্যিকভাবে খুবই ভাল ব্যবহার করছিল। কিন্তু তলে তলে একজন লোককে ঠিক করল, যে ছাদের উপর থেকে বড় একটি পাথর নবীজীর মাথার উপর ফেলবে। ফলে তিনি শহীদ হয়ে যাবেন। ইন্নালিল্লাহ।এ ভয়াবহ সংবাদ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন। ফলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে চলে যান। ফলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়।[উয়ুনুর আছার-২/৭০-৭১, দারুল কলম প্রকাশনী,বৈরুত,সীরাতে ইবনে হিশাম-২/১৯০]
দু’টি জঘন্য কাজ করেছে বনী নাজীর। যথা-
১ চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
২ নবীজীকে হত্যা করার মত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছে।
তাদের গাদ্দারীর শাস্তি দিতে মুসলিম বাহিনী যখন আগমণ করে,তখন তারা তাদের দুর্গে আশ্রয় নেয়। মুসলমানগণ তাদের দুর্গ অবরোধ করে রাখেন। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আরেকটি ষড়যন্ত্রের ছক আঁকে তারা। সংবাদ পাঠায়, মুসলমানদের পক্ষ থেকে তিনজনকে পাঠানো হোক দুর্গে। আর বনী নজীরের পক্ষ থেকে তিনজন পাদ্রীকে পাঠানো হবে। পরস্পর আলোচনা করে যদি তিন পাদ্রী মুসলমান হয়ে যায়। তাহলে তারা সবাই মুসলমান হয়ে যাবে। কিন্তু তারা এখানেও গাদ্দারী করে তাদের পাঠানো পাদ্রীদের খঞ্জর লুকিয়ে নিতে আদেশ করে। যেন মুসলিম উলামার সাথে সাক্ষাৎ হতেই তাদের হত্যা করতে পারে। [সীরাতে মুস্তাফা, ইদ্রিস কান্ধলবীকৃত-২/২৬৮]এরকম জঘন্য গাদ্দারী প্রকাশ হবার পরও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেননি। বরং তাদের মদীনা থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সুযোগ করে দেন।তখন তারা খায়বারে গিয়ে অবস্থান শুরু করে। খায়বারে যাবার সময় তারা তাদের বাড়ি ঘরের দরজা চৌকাঠও খুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের সর্দার ছিল হুয়াই বিন আখতাব এবং কিনানা বিন রাবী। [উয়ুনুল আছার-২/৭১]
এখানেই তাদের ষড়যন্ত্র শেষ নয়। খায়বরের অধিবাসী বনী নজীরের সর্দার হুয়াই বিন আখতাব মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের এবং কিনানা বিন রবী বনী গাতফানকে ফুঁসলিয়ে দশ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা অবরোধ করেছিল খন্দক যুদ্ধে। [ফাতহুল বারী-৭/৫৮১, খন্দক যুদ্ধ]শুধু তাই নয়। পূর্ব থেকে মুসলমানদের সাথে সন্ধিতে চুক্তিবদ্ধ থাকা বনী কুরাইজাকেও বিদ্রোহ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজী করায় এ খায়বারের ইহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখতাব।বনী নজীরের সর্দার হুআই বিন আখতাব বনু কুরাইজার সর্দার কাব বিন আসাদ কুরাজীকে তার দলে টানতে যখন আসে, তখন কা’ব দৃঢ়তার সাথে বলেছিলঃ
وَيْحكَ يَا حُيَيُّ: إنَّكَ امْرُؤٌ مَشْئُومٌ، وَإِنِّي قَدْ عَاهَدْتُ مُحَمَّدًا، فَلَسْتُ بِنَاقِضٍ مَا بَيْنِي وَبَيْنَهُ، وَلَمْ أَرَ مِنْهُ إلَّا وَفَاءً وَصِدْقً
আফসোস তোমার জন্য হে হুয়াই! নিশ্চয় তুমি এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। নিশ্চয় আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং আমার ও তার মাঝে যে চুক্তি রয়েছে তা আমি ভঙ্গ করতে পারবো না। আর আমি তাকে একজন ওয়াদা রক্ষাকারী এবং সত্যনিষ্টই পেয়েছি। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/২২০, গাযওয়ায়ে খন্দক অধ্যায়)এভাবে ইসলামী রাষ্ট্র ধ্বংস করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যায় খায়বারের ইহুদীরা। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যারও চেষ্টা করেছিল এ গাদ্দাররা।এরকম জঘন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে তথাকথিত মুক্তমনাদের মতামত কী?তাদের শাস্তি প্রদান করা কি অপরাধ? নাকি কঠোর শাস্তিটাই ন্যায্য বিচার? আপনাদের মুক্ত বিবেক কী বলে?
সফিয়্যার স্বামী ছিল কিনানা বিন রাবী। যে ছিল বনী নজীরের একজন নেতা। এ গাদ্দার বনী গাতফানকে ফুঁসলিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল।তারপরও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে শান্তি চুক্তি করে তাদের খায়বার ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এখানেও তারা গাদ্দারী করে গনীমতের প্রচুর সম্পদ সম্বলিত থলে চুরি করে পালাচ্ছিল।যার নেতৃত্ব দিচ্ছিল কিনানা বিন রাবী। শুধু তাই নয় সে সাহাবী মাহমুদ বিন মাসলামা রাঃ কে শহীদ করেছিল।তার এসকল অমার্জনীয় অপরাধের কারণে তাকে হত্যা করা হয়। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/৩৩৬-৩৩৭]এতগুলো অমার্জনীয় অপরাধ করার পরও অপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়া। নিরাপদ স্থানে চলে যেতে দুই দুইবার সুযোগ দেয়া। এমন কোন সেনা নায়ক, রাষ্ট্র বিজেতার নজীর পৃথিবীর ইতিহাস কখনো দেখাতে পারেনি। দেখাতে পারবেও না।
কথিত মুক্তমনারাই কি উপরোক্ত অমার্জনীয় দোষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমন সহনশীল আচরণ করতে পারবেন?মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধী রাজাকারদের ক্ষেত্রে কি কথিত মুক্তমনারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই নীতি অনুসরণ করতে পেরেছেন? রাজাকারদের নিরাপদ স্থানে চলে যাবার সুযোগ দিতে কি তারা রাজী? নাকি বিদেশ থেকে ধরে এনেও তাদের বিচার করার পক্ষপাতি?নিজের বিবেককে একবার কি জিজ্ঞেস করেছে মুরতাদ সেই কথিত মুক্তমনা?আর স্বামীহারা অসহায় সফিয়্যাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথ মর্যাদায় বিয়ে করে, স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য করেছেন চরম সম্মানিতা। রাজিয়াল্লাহু আনহা।পূর্ণ অবস্থান সামনে রাখলে কোন বিবেকবান, যুক্তিবাদী, মুক্তমনা মানুষ নবীজীর খায়বার যুদ্ধ নিয়ে অভিযোগ তুলতেই পারে না।বে যাদের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটেছে। বিবেক-বুদ্ধি ঘুন পোকায় খেয়েছে। এমন উন্মাদ নাস্তিকের মুখেই মানায় এসব হাস্যকর অভিযোগ।