পাঁচ ওয়াক্ত নামায:মধ্যবর্তী গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়:
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারে যত্নবান তার কি কোনো গোনাহ থাকতে পারে? একে তো নামাযী ব্যক্তি গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে, প্রতি নামাযেই গোনাহ থেকে মাফ চাইবে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প করবে- এটাই স্বাভাবিক।
তারপরও যদি কোনো গোনাহ হয়ে যায় তো আল্লাহ্ তাআলা গাফুরুর রাহীম- নামাযের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেন-
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرّا، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.
(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন-
فَذلِكَ مَثَلُ الصّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মিটিয়ে দেন।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮]হযরত আবু হুরায়রা (রাযি:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলতেন-
الصّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমযান থেকে আরেক রমযান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গোনাহ না থাকে)।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩]
অর্থাৎ, কবীরা গোনাহ করলে সকল গোনাহের কাফফারা হবে না; বরং শুধু সগীরা গোনাহের কাফফারা হবে। কারণ, কবীরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না (তেমনি বান্দার হকও; যা অন্য হাদীস থেকে বোঝা যায়)।
জুমার নামায: সারা সপ্তাহের গোনাহ মিটিয়ে দেয়:
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি:) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ، وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করল এবং জুমায় এল। এরপর মনোযোগসহ খুতবা শুনল ও চুপ থাকল। আল্লাহ্ তা’আলা তার গত জুমা ও এই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহ মাফ করে দিবেন; আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গোনাহও মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি নুড়ি স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭
আরো পড়ুন
ওযু:গোনাহ ধুয়ে দেয়:
নামাযের জন্য, তিলাওয়াত বা অন্য কোনো আমলের জন্য আমরা ওযু করি। নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করি; ওযুর মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই। আমরা দেখি, আমাদের শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওযু এর চেয়েও বেশি কিছু।
তা শুধু শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে দেয় এবং আমাদের পবিত্র করে- এটুকুই নয়; বরং তা আমাদের গোনাহ গুলোও ধুয়ে দেয়। গোনাহের নাপাকী থেকেও আমাদের পবিত্র করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন-
إِذَا تَوَضّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ – أَوِ الْمُؤْمِنُ – فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – حَتّى يَخْرُجَ نَقِيّا مِنَ الذّنُوبِ.
যখন মুসলিম ওযু করে- চেহারা ধোওয়ার সময় পানির ফোঁটার সাথে চোখের গোনাহগুলো ধুয়ে যায় (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা নবীজী বলেছেন, পানির শেষ ফোঁটার সাথে ধুয়ে যায়)।
যখন হাত ধোয় তো হাতের গোনাহগুলো ধুয়ে যায়।… যখন পা ধোয় তো পানির ফোঁটার সাথে পায়ের দ্বারা কৃত গোনাহগুলো ধুয়ে যায়।… এভাবে বান্দা গোনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৪]